শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

অস্থির সময়ের দিনলিপি



ইদানীং সময়টা ভাল যাচ্ছে না একদম। একটা অন্যরকম অস্থিরতা ভীষণ জট পাকিয়ে দিচ্ছে ভিতর-বাহিরে, সবকিছুতে। অনেক চেষ্টা করেও এর থেকে বেরুতে পারছি না। গদবাঁধা জীবনটা কেমন যেন বিরক্তিকর লাগছে। প্রতিদিন সকালে উঠে সেই অফিসের উদ্দেশ্যে ছোটা। সারাদিন ক্লান্তিকর একঘেয়ে দিনগুলো পার করার পর দীর্ঘ জটের পাহাড় ডিঙিয়ে ঘরে ফেরা। রাস্তায় বেরুলে সেই চিরাচরিত যানজট। যেদিকেই যাই, দিনের অনেকটা সময় কেড়ে নেয় এই দীর্ঘ যানের-জট। আগের তুলনায় রাস্তার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রশস্তও হয়েছে কিন্তু তখনকার সময় থেকে যানজট বেড়েছে বহুগুণ। বাসার ফেরার পরের সল্প সময়টুকু যেন উড়ে চলে যায়। অতঃপর ঘুম। আবার সেই ছুটে চলা। কোন বৈচিত্র্য নেই।
বাবাকে খুব মনে পড়ে আজকাল। আগে কোন কারণে মন খারাপ থাকলে বাবা ঠিকই বুঝতে পারতেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতেন- কি রে, কোন সমস্যা? সবসময় বাবা সাহস যোগাতেন। সেটা বেশির ভাগ সময়ই টনিক হসেবে কাজ করতো। আজ বাবা নেই, মাথার উপর কোন ছায়াও নেই। পরিবারের যে কোন সমস্যা বাবা নিজের কাঁধেই তুলে নিতেন। তখন বুঝতে পারিনি জীবনটা কত জটিল! এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। বাইরে- অফিস, ঘরে- বউ-বাচ্চা! মাঝখানে পড়ে আমার অবস্থা গুরুচরণ! সারাদিন অফিস শেষে ঘরে ফিরে মেয়ের আবদার; বউয়ের অভিযোগ- মেয়েটার সামনে পরীক্ষা, তোমার কি কোন দায়িত্ব নাই? কি আর করা! মেয়েকে নিয়ে বসা হয়। আজকাল লেখালেখিতেও মন নেই তেমন। মাথার ভিতরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কয়েকটা লেখা শুরু করেও এগুতে পারছি না।
অনেকদিন আড্ডা দেয়া হয়না আর। আজ এর সময় মেলে তো ওর মেলে না। অতএব আমাদের আর একসাথে বসা হয় না। কোথাও যাওয়া হয় না। কেমন যেন সবাই যান্ত্রিক হয়ে উঠছি দিন দিন। বন্ধুরা যে যার মত ব্যস্ত। ব্যবসা, সংসার, ক্যারিয়ার! সবাই ছুটছে। আমার আর ছোটা হয় না। অফিস আর সংসারের বাইরে ব্লগটাই একমাত্র আড্ডার জায়গা। কয়েকদিন ধরে ব্লগে আসতে পারিনি। একে তো সময়ের অভাব, তার উপর শরীরটাও ভাল যাচ্ছিল না। সবকিছুর ভিড়ে কেবলই মনে হচ্ছিলো কি যেন জরুরি কাজ বাকি পড়ে আছে!
অনেকদিন ধরে মানবতা বিরোধী বিচারের রায় ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পর পর কিছু রায় সেই হতাশা কাটিয়ে দেয়েছে অনেকটা। এখন প্রত্যাশা দ্রুত বাস্তবায়ন। তবুও আশেপাশের মানুষগুলোর অভিব্যক্তি শুনলে মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। এ রায় যেন তাদের গাত্রদাহের কারণ। সারা বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে আর আমরা কেন অতীত নিয়ে পড়ে আছি? উত্তর দিতে গিয়েও সামলে নেই নিজেকে। এ ধরনের মানুষদের সাথে তর্ক করাও বৃথা। এতকিছুর মধ্যে আশার কথাও অবশ্য আছে। অনেকদিন পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। আমাদের ক্রিকেট টিম দারুণ পারফর্ম করছে ইদানীং। টেস্টে বাংলাওয়াশের পর এখন ওয়ানডেতেও সে পথে এগুচ্ছে। শুভকামনা ওদের জন্য।

আজ আমার মেয়েটার জন্মদিন। সে নিজে থেকেই তার প্রিয় মানুষদের নিমন্ত্রণ করে রেখেছে। অতএব আবদার রক্ষা না করে উপায় কি? আমার রিয়াসা, দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, সেদিন জন্ম হল ওর। ছোট ছোট পায়ে হেঁটে বেড়াতো সারা ঘরময়। কচি দু’টি হাত বাড়িয়ে দিতো বাবার উদ্দেশ্যে। আজও দেয়; তবু কেন যেন মনে হয় ধীরে ধীরে ও বড় হয়ে যাচ্ছে, আর এভাবে বড় হতে হতেই একদিন দূরে চলে যাবে। বুঝি, এটাই নিয়ম। এমনি করেই সবকিছু মেনে নিতে হবে আমাদের। তবে আমার একমাত্র চাওয়া- মেয়েটা যেন মানুষ হয়। একজন ভাল মানুষ।। 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উপন্যাসঃ ফেরা (পর্বঃ ২১ - ২৫ - শেষ পর্ব)

এ ই উপন্যাসটিতে সম্মুখ সমরের কোন ঘটনা তুলে ধরা হয়নি।  ওয়ারফ্রন্টের কোনও দৃশ্য নেই। তবে এই লেখায় মূলত যে গল্পটি বলার চেষ্টা ক রা হয়েছে  তা মু...