শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮

সিরিজ গল্প - ২ একাকীত্বের অবসরে




এক্সকিউজ মি!
বাগানে কাজ করার ফাঁকে হঠাৎ অচেনা কন্ঠস্বর শুনে ঘুরে তাকালো লোকটি। এক অপরূপা অষ্টাদশী তরুণী তার বাগানের এক পাশে দাঁড়িয়ে। বিকেলের এই স্নিগ্ধ আলোয় সম্পুর্ণ অচেনা তরুণীকে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল-
আমাকে বলছেন?
এখানে তো আর কেউ নেই! চটপট উত্তর দিলো আগন্তুক তরুণী।
বলুন কি করতে পারি আপনার জন্য?  
এটা কি অনিরুদ্ধ সাহেবের বাসা?
জ্বী, এটাই অনিরুদ্ধ সাহেবের বাসা। আপনি কোত্থেকে এসেছেন?
চিটাগাং থেকে। কাইন্ডলি ওনাকে একটু ডেকে দিবেন?
নিশ্চয়ই। বাগানের পাশে রাখা চেয়ারটা দেখিয়ে তরুণীকে বসতে বলল লোকটি। আপনার পরিচয়টা কি জানতে পারি? গাছে পানি দিতে দিতেই জিজ্ঞেস করল লোকটি।
আমি শম্পা।
আমি আসলে অনির সাথে আপনার সম্পর্কটা জানতে চাচ্ছিলাম। ভদ্রলোক হেসে জবাব দিলো।
সম্পর্কটা কি জরুরী?
না, মানে জানতে চাচ্ছিলাম অনিকে ঠিক কতদিন ধরে চেনেন? আপনাকে এর আগে কখনো দেখিনি তো!
দেখেন, প্রয়োজনটা যার সাথে তাকে ডেকে দিলেই ভাল হয়। তরুণী কিছুটা বিরক্ত।
আমি দুঃখিত, আপনি রেগে যাচ্ছেন। আসলে অনির বাসায় ফিরতে একটু দেরি হবে, আপনাকে যে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। বাগানের পাশে রাখা চেয়ার দেখিয়ে শম্পাকে বসতে বলল লোকটি। তারপর আবার গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
আমি কি তাহলে পরে আসবো?
না না, একটু অপেক্ষা করুন। আপনার সাথে কি আর কেউ এসেছে? কিছু মনে করবেন না, আসলে এতদূর থেকে এসেছেন আবার অনিকে ঠিক চেনেনও না, তাই প্রশ্নটা করলাম।
একজন অপরিচিত মহিলাকে এতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখে তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে এত প্রশ্ন করা একটু অশোভন নয় ক? শম্পা আরও কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই দেখে লোকটির মুখে হাসি ছড়ানো, তার দৃষ্টি গেটের দিকে নিবদ্ধ। পিছনে তাকিয়ে দেখে গেট দিয়ে প্রবেশ করছে নীলা।
কী-রে, তোদের পরিচয় হয়েছে? শম্পাকে উদ্দেশ্য করে বলল নীলা।
দেখো না ভাবী, এই ভদ্রলোক সেই তখন থেকে আমার সাথে কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু তোমার অনিরুদ্ধ কিংবা অনি বাবুকে ডেকে দিচ্ছে না।
কে অনিকে ডেকে দিবে? ও-ই তো অনি।
এবার শম্পার অবাক হবার পালা। লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। কী বোকা সে! এতক্ষণ ধরে লোকটা হেঁয়ালি করে যাচ্ছিল আর সে বুঝতেই পারল না। লোকটির দিকে তাকাতেই পারছিল না। পরিবেশটা সহজ করে দিল অনিই।
দোষটা আমারই। আমিই পরিচয় দেইনি ওনাকে। মনে হচ্ছিল কোথাও কোন গোলমাল আছে, সেটা বুঝতেই কিছুটা সময় নিচ্ছিলাম। নীলাপু, কোন খবর না দিয়ে তুমি হাজির!
আমি একা না, আমরা সবাই এসেছি। তুই রেডি হয়ে নে।
কোথায় যাব? কথা ছিল তোমরা এখানে এলে আমাকে জানিয়ে আসবে। আমি তোমাদের থাকার ব্যবস্থা করব।
আরে হঠাৎ করেই আসার প্ল্যান হল। শিহাব আগে থেকেই সব ঠিক করে আমাকে জানাল, তাই তোকে আর খবর দেয়া হয়নি। তখনি মনে মনে ঠিক করলাম তোকে একটা সারপ্রাইজ দব।
হুম, সারপ্রাইজ তো ভালই হয়েছে, তা তোমরা উঠেছ কোথায়?
সী প্যালেসে।
ওনাকে তো ঠিক চিনলাম না!
ও শম্পা, আমার মামাতো ননদ।
তুমি এরকম একজন সুন্দরী রমণীকে অচেনা অজানা একজনের খোঁজে পাঠালে? নাহ! নীলাপু, তুমি ঠিক আগের মতই রয়ে গেছ।
ও না চিনলে কি হবে, আমি তো তোকে চিনি! তাছাড়া পেছন থেকে আমি সবই দেখছিলাম। তুইও তো সেই আগের মতই আছিস, একটুও বদলাস নি।
, এই কাহিনী! ওনাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে আমাকে বোকা বানানো হল, দাঁড়াও আমিও সুযোগ পেয়ে নেই। শম্পা নিচু স্বরে নীলাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল।
নীলাপু, তোমরা ভিতরে আস। অনি তার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল
আমরা বাগানেই বসি, তুই রেডি হয়ে আয়।
পাঁচ মিনিটের মধ্যেই অনি তৈরি হয়ে বাইরে এলো। নীলা আর শম্পা তখন ঘুরে ঘুরে অনির বাগানটা দেখছিলো।
তোর বাগানটা খুব সুন্দর, নিজ হাতেই সেবা করিস, না?
হ্যাঁ, বাসার সামনের খালি জায়গাটা কাজে লাগিয়েছি আর কি। তুমি কি এখান থেকেই চলে যাবে? আরে, আমার ডেরাটা একটু দেখবে না? আর এরকম একজন সুন্দরীকে এতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখে যে অপরাধ করলাম, তার কিছুটা শুধরে নেয়ার সুযোগ দবে না? 
অসুবিধা নেই। অন্য সময় সবাই মিলে বেড়িয়ে যাব। ওরা সবাই বীচে অপেক্ষা করছে, তুই তাড়াতাড়ি চল তো!
অনি নীলার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে- নীলাপু, তোমাকে আজ অনেক খুশি লাগছে।
          বীচে পৌঁছেই ছেলেমেয়েরা স্পীডবোটে চড়ার বায়না ধরেছিলো, তাই শিহাব ওদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। শম্পা ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা নিয়ে ওদের পছনে ছুটে গেলে কিছুক্ষণের জন্য একা হয়ে যায় নীলা আর অনি।
অনি, তোর কি মন খারাপ? অনিকে কিছুটা আনমনা দেখে বলল নীলা।
কেন বল তো?
চুপ করে আছিস যে! আমি এসে তোর মন খারাপ করে দিলাম, না?
নাহ! তা কেন? তোমাকে দেখছিলাম
আমাকে নতুন করে দেখার আর ক আছে! তুই বরং নিজের কথা ভাব, একটা বিয়ে করে ফেল দেখবি জীবনটা অনেক গোছালো হবে।
বিয়ে করলেই ক সব সমস্যার সমাধান হয় নীলাপু?
সব সমস্যার কথা বলতে পারব না তবে জীবনের উপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসে। অনেক গোছানো হয়।
তুমি ভাল আছ নীলাপু?
হ্যাঁ, ভালই তো। আমাকে দেখে কি মনে হয় খারাপ আছি?
অনি হাসে।
তোমার চোখ বলছে তুমি ভাল নেই।
বাদ দে আমার কথা। তুই নিজে খুব আছিস তাই না? আপনজন থেকে এতটা দূরে একাকী পড়ে আছিস, এটাকে কি ভাল থাকা বলে?
অনি চুপ।
পালিয়ে বেড়াচ্ছিস? নীলা আবার প্রশ্ন করে।
নাহ! পালানোর কী আছে? চাকরিসূত্রেই তো এখানে থাকা।
তুই না বললে ক হবে, আমি সবই বুঝি।
অনি মন মনে বলে, আমার ভাল থাকা নিয়ে তুমি এত ভাবছ কেন নীলাপু? কারো বিরুদ্ধে আমার তো কোন অভিযোগ নেই! আমার একাকীত্ব নিয়ে বেশ আছি আমি।
আমার উপর তোর অনেক রাগ, তাইনা অনি?
হঠাৎ এই প্রশ্ন?
এমনিই মনে হল। সেই যে ট্রেনে তোর সাথে দেখা হল তারপর আর যোগাযোগ রাখলি না, একবার ফোনও করলি না।
আসলে সময় পাই না, তাছাড়া অঞ্জন থেকে তোমার সব খবরই তো পাই।
তুই, আমি, অঞ্জন- ক চমৎকার সময় ছিল আমাদের! অঞ্জন বাসায় আসলে ইদানীং তোর কথা খুব বলে। আমার একটা জিনিস খুব ভাল লাগলো। তুই ঠিক আগের মতই ইমোশনাল আছিস।
ম্লান হেসে অনি বলল- আমরা সবাই কম-বেশি ইমোশনাল।
নীলা বলল- তা ঠিক। মনে আছে ক রকম পাগলাটে ছিলি! তোর সেই পাগলামিগুলোর কথা মনে হলে এখনো খুব হাসি পায়।
অনি ঘুরে সাগরের দিকে তাকায় আর মনে মনে বলে, ওগুলো পাগলামি ছিল না নীলাপু, ওগুলো সব সত্যি ছিল। আমার মনের কথা ছিল, তুমিও তা জানতে।
রে, কি ভাবছিস?
তেমন কিছু না। তারপর স্মিত হেসে বলে- সেই সময়ের তোমার সাথে আজকের তোমাকে মিলিয়ে দেখছিলাম।
কি দেখলি? কোন মিল পেলি? হাসতে হাসতে বলে নীলা।
ছেলেমানুষ ছিলাম আমরা!
নীলা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে- এটাই তো স্বাভাবিক।
কি স্বাভাবিক? নীলার দিকে ঘুরে তাকায় অনি।
সময় মানুষকে বদলে দেয়।
হুম। কারো কারো জন্য এই বদলে যাওয়াটা সুখের হয় না।
সবার জীবন তো একরকম যাবে না। আমি তোর জন্য মেম্যে দেখছি। তুই বিয়েটা কর। না-হলে রিনি আপুর ফোন নম্বরটা দে। আমি ওর সাথে কথা বলবো।
অনি শব্দ করে হেসে ফেল। তুমি দেখছি আদাজল খেয়ে লেগেছো। কিন্তু সবার সাথে কী মনের মিল হয়?
বিয়ের পরের জীবনটা আসলে দুজনের বোঝাপড়ার উপর নির্ভর করে। এখানে সবাইকেই কিছুটা স্যাক্রিফাইস করতে হয়।
স্যাক্রিফাইস করার পরও কি হিসেবটা মেলে? তোমার বেলায় মিলেছে, বল?
নীলা কিছু বলে না। দৃষ্টিটা ফিরিয়ে নেয় সাগরের দিকে।
অনি আবার প্রশ্ন করে- কী হল নীলাপু, কিছু বলছ না যে!
অনেকক্ষণ পর নীলা বলে- আমার কথা থাক। তোর এই ছন্নছাড়া অবস্থা আর কতদিন চলবে? শুধু শুধু স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে জীবন চলে না। যে দিন চলে গেছে তাকে ভেবে কষ্ট পাওয়া কেন? জীবন মানেই কিছুটা কম্প্রোমাইজ।
অনি আবার হাসে। তারপর বলে- ভাল বলেছ, কম্প্রোমাইজ। বুঝতে পারছি আমরা সবাই প্রতিনিয়ত কম্প্রোমাইজ করছি। কেন মানুষকে এত কম্প্রোমাইজ করতে হয় বলেতে পারো? কেন আমাদের ছোট ছোট চাওয়াগুলো পূরণ হয় না?
মানুষের সব চাওয়া ক পূরণ হয়? তুই আর কোন ভুল করিস না। আচ্ছা, শম্পাকে তোর কেমন লাগলো? ও খুব ভাল মেয়ে তুই চাইলে আমি ওর বাবা-মার সাথে আলাপ করতে পারি।
অনি হেসে বলে- তারপর আবার কম্প্রোমাইজ?
দূর! ক যে বলিস না! ওটা একটা কথার কথা। একসাথে থাকতে হলে দুজনেরই বোঝাপড়া লাগে। কিছুটা ছাড় দুপক্ষ থেকেই দিতে হয়, এটা হয়ে যায়।
অনি একটু থেমে বলে- সবার সাথে ক আর বোঝাপড়া হয়! 
শম্পাকে ক্যামেরা নিয়ে ওদের দিকে আসতে দেখে থেমে যায় আলাপচারিতা। কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে শম্পা বলে,
ওফ! ওদের সাথে আমি ছুটে পারি? ওরা অনেক দূরে চলে গেছে, আমি একটু রেস্ট নেব।
তোমরা কথা বল, আমি দেখে আসি ওরা কতদূর গেল, বলে উঠে দাঁড়ায় অনি ।
না না, তুই বস। আমি দেখছি বলে ক্যামেরাটা নিয়ে ছেলেমেয়েদের দিকে হেঁটে যায় নীলা।
তারপর, অনিরুদ্ধ সাহেব? ভাবী আমাকে আপনার পাহারায় রেখে গেল, বুঝেছেন?
আজকাল কারো পাহারা দরকার হয় নাকি? মেয়েরা এখন অনেক বেশি স্বাধীন! হেসে বলল অনি।
তবুও গার্জিয়ানরা কিন্তু ইন্সিকিউরড ফিল করে।
নীলাপু করবে না এটুকু জানি। দেখলেন না আপনাকে একাই আমার ওখানে পাঠালেন!
সে তো আপনার ওখানে, কারণ আপনার উপর ভাবীর অগাধ বিশ্বাস। এখন দেখেন আবার সেই আপনাকেই পাহারায় রেখে গেলেন। ঠাট্টাচ্ছলে বলে শম্পা।
নীলাপু শেষ পর্যন্ত আমাকে পাহারাদার বানিয়ে দিল! তাও এ রকম একজন সুন্দরী মহিলার? বলে হাসতে লাগলো অনি।
বুঝেছি জনাব, মেয়েদের পাহারাদার হতে আপনার আপত্তি আছে। থাক, আপনাকে আর ভয় পেতে হবে না। শুনলাম আপনি অনেকদিন ধরে কক্সবাজারে আছেন। এক জায়গায় এতদিন ভাল লাগে?
হ্যা, অনেকদিন হয়ে গেল! সবার কথা জানি না তবে আমার কাছে এ জায়গার তুলনা নেই। কখনো পুরনো লাগে না।
একা একা থাকেন, খারাপ লাগে না?
এটা আসলে অভ্যস্ততার ব্যাপার। একা থাকার একটা মজা আছে, নিজের মত করে থাকা যায়। আর একা বলতে তো আর সম্পুর্ন একা না, আশে পাশে কত মানুষ! বন্ধু বান্ধব। বাসায় শুধু একা, এই যা
আমি ওটাই বুঝিয়েছি। সাগর আপনার অনেক পছন্দের, তাই না?
এখানে থাকতে থাকতে ওকে বড় বেশী ভালোবেসে ফেলেছি। তাছাড়া সাগর অপছন্দ এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ঠিকই বলেছেন। সাগরকে সবাই ভালবাসে। আমরাও তো সাগারের টানেই বার বার ছুটে আসি এখানে। ঐ তো নীলা ভাবী আসছে।
কি রে তোরা কি নিয়ে আলাপ করছিস? শম্পার উদ্দেশ্যে বলল নীলা।
এই কক্সবাজার, সাগর, ওনার একা থাকা- এইসব। ভাইয়ারা ফিরেনি এখনো?
হ্যাঁ, স্পীডবোট ভ্রমণ শেষ। এখন সাঁতার কাটা চলছে। শম্পা, আমার ভাইটিকে কেমন লাগলো?
ভাল, তবে তোমার ভাই তো মেয়েদের পাহারাদার হতে রাজি না।
ঠিকই তো। অনি শুধু পাহারাদার হবে কেন, প্রয়োজনে আরও বড় দায়িত্ব নিবে।
তোমরা কথা বল, আমি দেখে আসি ওদের কি অবস্থা বলে উঠে পড়ল অনি।

ছেলেমেয়েদের সমুদ্রস্নান শেষ হলে সবাই মিলে আবার মেতে উঠলো হাসি ঠাট্টায়। 
অনি, সন্ধ্যায় এসো, গল্প করা যাবে। শিহাব বলে ঠল।
আপনারা সবাই মিলে আমার বাসায় আসেন। এমনিতেই তো আমার ওখানে আসার কথা ছিল।
আগে বিয়ে কর, তখন তোমার বউয়ের হাতের রান্না খেতে আসব।
শিহাব ভাই, আপনিও নীলাপুর মত আমার বিয়ে নিয়ে লাগলেন?
জ্বী ভায়া, আমরা অবিবাহিত পুরুষ মানুষের বাসায় আসি না। হাসতে হাসতে বলে শিহাব।
বুঝেছি, সব নীলাপুর ষড়যন্ত্র।
এই অনি, তুই কিন্তু সন্ধ্যায় অবশ্যই আসবি, আমরা একসাথে রাতের খাবার খাব।
ঠিক আছে তবে একটা শর্ত, আজ রাতে তোমরা আমার গেস্ট হবে।
নীলা হেসে বলে- আচ্ছা ঠিক আছে।
          সন্ধ্যার পর রেস্টুরেন্টে আড্ডা বেশ জমে ওঠে। শিহাবই বেশির ভাগ সময় মাতিয়ে রাখছে সবাইকে। অনিকে চুপচাপ দেখে শিহাব বলে- কি ভায়া, তোমার কথা এত শুনেছি নীলা আর অঞ্জনের মুখে যে আজকে ঠিক মেলাতে পারছি না। তোমার দুষ্টুমির অনেক গল্পই আমার মুখস্থ। দাবা খেলা হয় এখনো?
হুম, মাঝে মাঝে চলে। আসলে লোকজন সবাই ব্যস্ত, এত সময় কোথায়?
শুনেছি তুমি মাঝে মাঝে চিটাগাং যাও, বাসায় চলে আস। জমিয়ে আড্ডা মারা আর দাবা খালা যাবে।
চিটাগাং মাঝে মাঝে আসা হয় তবে কাজ সেরে দ্রুত ফিরে আসতে হয় এখানে। ইচ্ছে থাকলেও সময় করতে পারি না।
ব্যাচেলর মানুষ, এখন সময় করতে না পারলে বিয়ের পর তোমার দেখাই পাওয়া যাবে না।
অনি হেসে বলে, তাই তো খুব শীঘ্রই ও বোঝা কাঁধে নিচ্ছি না।
অনির কথা শুনে শিহাব হো হো করে হেসে উঠে নীলার উদ্দেশ্যে বলল, তুমি তো অনির জন্য পাত্রী দেখছো, অথচ দেখো সে কি বলছে।
শিহাবের হাসির শব্দে ফিরে তাকায় নীলা। আমার কথায় তো কোন কাজ হনা, দেখো তুমি কিছু করতে পারো কী-না।
কথার ফাঁকে ফাঁকে অনি খেয়াল করল নীলা বেশ চুপচাপ। বেশীর ভাগ সময়ই ছেলেকে খাওয়ানোর কাজেই ব্যস্ত।
খাওয়া-আড্ডা-গল্পে বেশ রাত হয়ে গেল। এবার ফেরার পালা। সবাই একটু সামনে এগিয়ে গেলে নীলা অনির সাথে কথা বলতে বলতে এগোয়।
অনি কাল সকালে আমরা চলে যাব, পারলে একবার আসিস।
আচ্ছা। 
          সকালে সাতটা। অনি হোটেলের সামনে এসে দেখে ওরা চেক আউট হয়ে মালামাল গাড়িতে তুলছে। অনিকে দেখে এগিয়ে এল নীলা।
তোর সাথে আবার কবে দেখা হবে জানি না। চিটাগাং এলে অবশ্যই বাসায় আসবি। না আসলে আমি ভীষন রাগ করব।
তুমি এমনভাবে বললে যেন আমাদের আর দেখা হবে না।
আমি বুঝি, তুই আমার সাথে দেখা হবার ভয়েই বাসায় যেতে চাস না।
আসলে তোমার কষ্ট বাড়াতে চাই না।
বাড়লে বাড়ুক, তুই অবশ্যই আসবি।
আচ্ছা দেখি
আবার দেখি!
শিহাব লাগেজগুলো গাড়িতে তুলে নীলাকে তাড়া দেয়। অনি থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় নীলা।
ভাল থেকো নীলাপু।
নীলা কিছুদূর এগিয়ে পেছন ফিরে তাকায়। অনি দূর থেকে দেখে নীলার চোখের কোণে জল চিক চিক করছে!


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উপন্যাসঃ ফেরা (পর্বঃ ২১ - ২৫ - শেষ পর্ব)

এ ই উপন্যাসটিতে সম্মুখ সমরের কোন ঘটনা তুলে ধরা হয়নি।  ওয়ারফ্রন্টের কোনও দৃশ্য নেই। তবে এই লেখায় মূলত যে গল্পটি বলার চেষ্টা ক রা হয়েছে  তা মু...