রাত সাড়ে দশটা। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে চিটাগাঙগামী ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে অনিরুদ্ধ।আজকাল কী যে হয়েছে! ট্রেনের টিকিট পাওয়া এক মহা ঝামেলা। তারপর, কোনরকমে টিকিট ম্যানেজ কর তো সময় মত ট্রেন ছাড়বে না। ওয়েটিং রুমে বসার জায়গা নেই, প্লাটফর্মে গিজগিজ করছে মানুষ। পাশে দাঁড়িয়ে এক লোক সিগারেট ফুঁকছে। তার পেছনে বসে একটি বাচ্চা মেয়ে অনবরত কাশছে। বাচ্চার মা বারবার লোকটির দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু সংকোচে কিছু বলতে পারছে না। অনিরুদ্ধ বিরক্ত হয়ে লোকটিকে বলল- এই যে মিষ্টার, দেখছেন না মেয়েটির সমস্যা হচ্ছে, অন্যদিকে গিয়ে খান। লোকটি পেছনে ফিরে একবার মেয়েটিকে দেখলো, তারপর যেন অনিচ্ছা সত্বেও অন্যদিকে চলে গেল। অনিরুদ্ধ ঘড়ি দেখলো। রাত এগারোটা। এতক্ষণে ট্রেন চলে আসার কথা।
ট্রেন এসে পৌঁছাল রাত বারোটায়। কম্পার্টমেন্টে ঢুকে নিজের আসনে গিয়ে বসলো অনিরুদ্ধ।গ্লাসটা তুলে দিতেই জানালা দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝাপটা এসে গায়ে লাগলো। কামরাটির বেশিরভাগ সিট এখনও খালি। বাইরে শহরের আলো-ঝলমলে রূপটা আরেকবার দেখে নিচ্ছে সে, খুব শিঘ্রই আর ফেরা হচ্ছে না ঢাকায়। ইদানীং আগের মত এখানে আসার ইচ্ছেটা আর হয় না, অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও শুধুমাত্র বোনের অনুরোধে এ-মুখো হতে হয়। গত তিনদিন এখানে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছিল সে। সারা শহরজুড়ে যানজট। দীর্ঘদিন কক্সবাজারে থেকে অভ্যস্ত অনিরুদ্ধর কাছে এই যানজট বড় অসহ্য লাগে এখন। শান্তিমত কোথাও চলাফেরা করার উপায় নেই। আজ ঢাকা থেকে বেরুতে পেরে যেন হাফ ছেঁড়ে বাঁচলো।
ট্রেন একটু একটু করে চলতে শুরু করেছে। অনিরুদ্ধর দৃষ্টি জানালার বাইরে। প্ল্যাটফর্মে ছিন্নমূল মানুষের দল ঘুমে বিভোর; ঘরহীন উদ্বাস্তু অথচ মনে হচ্ছে কী নিশ্চিন্ত বাধা-বন্ধনহীন জীবন এদের! অনিরুদ্ধ মনে মনে হাসে। আমার মতো, কোন পিছুটান নেই!
হঠাৎ পাশের সিটে কারো বসার শব্দ শুনে একবার ঘুরে দেখলো অনিরুদ্ধ। একজন ভদ্র মহিলা। দৃষ্টিটাআবার ফিরিয়ে নিলো জানালার দিকে। মনে মনে ভাবলো ‘কী ভাগ্য আমার! সারারাত একজন অচেনা মহিলার পাশে বসে যেতে হবে!’
ট্রেন ধীরে ধীরে চলতে শুরু করেছে। শহরের মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে এগিয়ে চলেছে। স্টেশনের ঝলমলে আলোটা সরে যেতেই রাতটাকে খুজে পেলো যেন!
এক্সকিউজ মি!
পাশ থেকে ভদ্র মহিলার কণ্ঠ শুনে ঘুরে তাকালো অনিরুদ্ধ।
যদি কিছু মনে না করেন আমাকে জানালার পাশে বসতে দেবেন? ‘এই শুরু হল জ্বালাতন!’ মনে মনে ভাবলো অনিরুদ্ধ।
যদি কিছু মনে না করেন আমাকে জানালার পাশে বসতে দেবেন? ‘এই শুরু হল জ্বালাতন!’ মনে মনে ভাবলো অনিরুদ্ধ।
ঠিক আছে, বসুন। মহিলাকে নিজের সিট ছেড়ে দিয়ে ভিতরের দিকে এসে বসলো অনিরুদ্ধ।
অনেক ধন্যবাদ।
‘কণ্ঠটা খুব পরিচিত লাগছে!’ মনে মনে ভেবে একবার ভদ্রমহিলার দিকে তাকালো অনিরুদ্ধ কিন্তু কামরার আবছা আলোয় ঠিক চেনা গেল না। আবার সেই নিরবতা। প্রায় আধঘণ্টা এভাবেই কাটলো, ট্রেন পরবর্তী ষ্টেশনে এসে থামলো।
কামরার ভেতরের আলো জ্বলে উঠতেই ভদ্রমহিলার দিকে দৃষ্টি পড়ল অনিরুদ্ধর। হঠাৎ একটা চমক লাগল। এ কাকে দেখছে সে! সেই চোখ, সেই মুখ। কিছুক্ষণ নির্বাক তাকিয়ে থাকলো। ভদ্রমহিলার মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি লক্ষ্য করে হাসি পেলো অনিরুদ্ধর। চেহারায় কিছুটা বয়সের ছাপ পড়েছে, তারপরও নীলা’পুকে চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি তার।
কেমন আছ নীলাপু?
কে? চট করে ঘুরে তাকালো নীলা।
আমি অনিরুদ্ধ।
অনিরুদ্ধ!
মনে নেই নীলাপু! অনিকে ভুলে গেছ?
কে? চট করে ঘুরে তাকালো নীলা।
আমি অনিরুদ্ধ।
অনিরুদ্ধ!
মনে নেই নীলাপু! অনিকে ভুলে গেছ?
অনি!
হুম। কেমন আছ তুমি?
ভাল। কিছুটা আনমনেই জবাব দিল নীলা। তারপর অনির দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, এ কী অবস্থা তোর! নাম না বললে চিনতেই পারতাম না। কেমন শুকিয়ে গেছিস, কালোও হয়েছিস অনেকটা।
তুমি কিন্তু সেই আগের মতই আছো।
কী যে বলিস না! বয়স বেড়ে গেছে, কত মুটিয়ে গেছি।
বয়স কোন ব্যাপার না, সৌন্দর্যটাই আসল। তুমি এখনো আগের মতই সুন্দর।
কত বছর পর তোর সাথে দেখা বলতো?
তা প্রায় দশ বছর হবে।
কোথায় ছিলি এতদিন?
অনি হেসে বলে- আমার কথা থাক। তুমি কেমন আছ বল।
ভাল। তুই কেমন আছিস? কোথায় থাকিস?
ভাল। কিছুটা আনমনেই জবাব দিল নীলা। তারপর অনির দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, এ কী অবস্থা তোর! নাম না বললে চিনতেই পারতাম না। কেমন শুকিয়ে গেছিস, কালোও হয়েছিস অনেকটা।
তুমি কিন্তু সেই আগের মতই আছো।
কী যে বলিস না! বয়স বেড়ে গেছে, কত মুটিয়ে গেছি।
বয়স কোন ব্যাপার না, সৌন্দর্যটাই আসল। তুমি এখনো আগের মতই সুন্দর।
কত বছর পর তোর সাথে দেখা বলতো?
তা প্রায় দশ বছর হবে।
কোথায় ছিলি এতদিন?
অনি হেসে বলে- আমার কথা থাক। তুমি কেমন আছ বল।
ভাল। তুই কেমন আছিস? কোথায় থাকিস?
কেন, অঞ্জন তোমাকে কিছু বলেনি?
নাহ! অঞ্জন তো মহা ব্যস্ত। আমার সাথে দেখা হলেও প্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া কথা হয় খুব কম। তোর খবর বল। কোথায় আছিস?
কক্সবাজারে। একটা প্রাইভেট ফার্মে আছি। শিহাব ভাইয়া কেমন আছে? ছেলেমেয়েরা?
ভাল। বিয়ে করেছিস নিশ্চয়ই!
অনি হাসে।
কী-রে, হাসছিস কেন? ও পর্ব আর শুরু করা হল না।
কী বলিস! কেন? মনের মত কাউকে পাস নি বুঝি? তুই যা চুজি ছিলি!
আমার কথা তোমার মনে আছে নীলাপু? স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করলো অনি।
ভাল। বিয়ে করেছিস নিশ্চয়ই!
অনি হাসে।
কী-রে, হাসছিস কেন? ও পর্ব আর শুরু করা হল না।
কী বলিস! কেন? মনের মত কাউকে পাস নি বুঝি? তুই যা চুজি ছিলি!
আমার কথা তোমার মনে আছে নীলাপু? স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করলো অনি।
মনে থাকবে না কেন? বিয়ের দিন তোর উপর আমার খুব রাগ হয়েছিল জানিস।
অনি অবাক হওয়ার ভান করে বলল-কেন?
সেদিন একটি বারের জন্যও তুই আমার সাথে দেখা করিসনি। একেবারেই উধাও।
অনি হাসতে হাসতেই বলল, তাহলেই দেখ আমাদের গণ্ডিটা কত ছোট! তোমার সাথে ঠিকই দেখা হয়ে গেল।
হ্যাঁ, আমাদের জীবনটাও অনেক ছোট।
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ। হঠাৎ নিরবতা ভাঙলো অনি।
তুমি সত্যিই ভাল আছ নীলাপু?
হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন রে?
এমনিই। জানতে ইচ্ছে হল।
নীলা জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কী হল নীলাপু? কিছু বলছ না যে!
আমি কেমন আছি তা জেনে তোর কি হবে? নীলার কণ্ঠে অভিমান।
অনি কোন উত্তর দেয় না। নীলা আবার জানালার দিকে ফিরে বাইরে তাকিয়ে থাকে। আজ চমৎকার জোছনা উঠেছে। তবুও তার মন খারাপ লাগে।
হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন রে?
এমনিই। জানতে ইচ্ছে হল।
নীলা জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কী হল নীলাপু? কিছু বলছ না যে!
আমি কেমন আছি তা জেনে তোর কি হবে? নীলার কণ্ঠে অভিমান।
অনি কোন উত্তর দেয় না। নীলা আবার জানালার দিকে ফিরে বাইরে তাকিয়ে থাকে। আজ চমৎকার জোছনা উঠেছে। তবুও তার মন খারাপ লাগে।
রাগ করলে?
না-রে! রাগ করব কেন? আসলে একেকজন একেকভাবে ভাল থাকার চেষ্টা করে। সেই অর্থেআমিও ভাল আছি।
সরি, বোধহয় তোমার মন খারাপ করে দিলাম। আচ্ছা বাদ দাও। নীলাপু তোমার কি সেই পুরানো কথা মনে পড়ে?
পড়বে না কেন? কী চমৎকার দিন ছিল আমাদের! তুই খুব ভাল দাবা খেলতিস, কোনদিনই আমি তোকে হারাতে পারিনি। তোর মনে আছে?
হ্যাঁ। তুমি খুব ভাল ভুনা খিচুড়ি করতে।
ভাবতে ভাবতে অনি ফিরে যায় সেই পুরানো দিনে। দশ বছর আগে—
এবার তোমার চাল, মন্ত্রী সামলাও। অনি বললো।
নীলা মন্ত্রী সামলানোর চিন্তায় ব্যস্ত। নীলার দিকে তাকিয়ে থাকে অনি, মন্ত্রমুগ্ধের মত।
‘তুমি কী সেই রেবেকা আপা!’ অনি বিড়বিড় করে আওড়ায়।
এই অনি! তোর কাহিনীটা কি রে, বল তো।
কই কিছু না তো! কাহিনী আবার কি?
আরে না না, আমি তোর মুখে অনেকদিন শুনেছি। ব্যাপারটা কী? কে তোর রেবেকা আপা?
আরে ও কিছু না, তুমি চাল দাও তো!
চাল তো দেবই, বল না কাহিনীটা কি? আমি শুনেছি তুই প্রায়ই বলিস- ‘তুমি কী সেই রেবেকা আপা’
অনি মনে মনে আবার আওড়ায়-‘শৈশবে কৈশোরে শিহরণ জাগা!’
কী-রে, কি ভাবছিস?
কিচ্ছু না। তুমি চাল দাও তো।
নীলা চাল দেয় আর বলে- তুই কিন্তু এড়িয়ে যাচ্ছিস।
আরে বলার কিছু থাকলে তো বলবো। তুমি ক্ষেপছ কেন? এটা তো একটা কবিতা।
তাহলে পুরাটা শোনা।
পুরাটা পারলে তো শোনাবো! এবার তোমার রাজা সামলাও।
নাহ! তোর সাথে আমি কখনোই জিততে পারি না ।
ঠিক আছে, একদিন তোমাকে জিতিয়ে দিবো।
তুই ইচ্ছে করে হারবি?
তোমার জন্য না হয় হারলাম।
ইস! সেটা আবার আমার জিত হল কী করে? আমি এভাবে জিততে চাই না।
তাহলে আর কি করবো? চেষ্টা করতে থাক, দেখ জিততে পার কিনা।
আমি খেলেই জিতবো।
এই অনি! তোর কাহিনীটা কি রে, বল তো।
কই কিছু না তো! কাহিনী আবার কি?
আরে না না, আমি তোর মুখে অনেকদিন শুনেছি। ব্যাপারটা কী? কে তোর রেবেকা আপা?
আরে ও কিছু না, তুমি চাল দাও তো!
চাল তো দেবই, বল না কাহিনীটা কি? আমি শুনেছি তুই প্রায়ই বলিস- ‘তুমি কী সেই রেবেকা আপা’
অনি মনে মনে আবার আওড়ায়-‘শৈশবে কৈশোরে শিহরণ জাগা!’
কী-রে, কি ভাবছিস?
কিচ্ছু না। তুমি চাল দাও তো।
নীলা চাল দেয় আর বলে- তুই কিন্তু এড়িয়ে যাচ্ছিস।
আরে বলার কিছু থাকলে তো বলবো। তুমি ক্ষেপছ কেন? এটা তো একটা কবিতা।
তাহলে পুরাটা শোনা।
পুরাটা পারলে তো শোনাবো! এবার তোমার রাজা সামলাও।
নাহ! তোর সাথে আমি কখনোই জিততে পারি না ।
ঠিক আছে, একদিন তোমাকে জিতিয়ে দিবো।
তুই ইচ্ছে করে হারবি?
তোমার জন্য না হয় হারলাম।
ইস! সেটা আবার আমার জিত হল কী করে? আমি এভাবে জিততে চাই না।
তাহলে আর কি করবো? চেষ্টা করতে থাক, দেখ জিততে পার কিনা।
আমি খেলেই জিতবো।
অনি বিড়বিড় বলে-সব খেলায় সবাই যেতে না নীলাপু। তুমি হয়তো দাবায় হারছো, কিন্তু আমি তো অন্য জায়গায় হেরে বসে আছি।
নীলা অনির দিকে তাকিয়ে হাসে। তোর কিছু একটা হয়েছে। দাঁড়া, রিনি আপার সাথে আলাপ করতে হবে। তোকে ডাক্তার দেখানো দরকার।
আচ্ছা নীলাপু, তোমার বয়স কত?
এই অনি, থাপ্পড় খাবি কিন্তু। তুই জানিস না মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই?
এই অনি, থাপ্পড় খাবি কিন্তু। তুই জানিস না মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই?
তুমি রাগছ কেন? আমি জানতে চেয়েছিলাম তুমি আমার থেকে কত বছরের বড়। এই ধরোআমার বয়স তো বাইশ, তাহলে তোমার বয়স বড় জোর তেইশ কি একটু বেশী, এই তো!
বেশী পেকেছিস না? যা ভাগ এখন।
তুমি কিন্তু আবার রেগে যাচ্ছো। অবশ্য রাগলে তোমাকে আরও বেশী সুন্দর লাগে।
তোকে বলেছে। অনি, আজ ভুনা খিচুড়ি করেছি, খেয়ে যাস।
তুমি কিন্তু আবার রেগে যাচ্ছো। অবশ্য রাগলে তোমাকে আরও বেশী সুন্দর লাগে।
তোকে বলেছে। অনি, আজ ভুনা খিচুড়ি করেছি, খেয়ে যাস।
তোমাদের নিয়ে এই এক সমস্যা।
মানে কি?
মানে হচ্ছে তোমাদের বোঝা বড় কঠিন। এই বললে চলে যেতে, আবার এখনই নিমন্ত্রণ। কী অদ্ভুত!
তোর এত বুঝে কাজ নাই। এখানে চুপচাপ বসে থাক। খেয়ে তবে যাবি।
তুমি বলছ আর আমি খাব না তাও কী হয়! এই আমি বসলাম।
নীলা হাসে। দাবার গুটিগুলো গুছিয়ে রাখে।
তুমি বলছ আর আমি খাব না তাও কী হয়! এই আমি বসলাম।
নীলা হাসে। দাবার গুটিগুলো গুছিয়ে রাখে।
অনি, নতুন কোন কবিতা লিখিস নি?
হুম, লেখা চলছে।
আমাকে আগে দেখাবি।
অনি মনে মনে বলে-তোমাকে নিয়ে লেখা, তুমি ছাড়া আর কে পড়বে! মুখে কিছুই বলে না। কেবল নীলার চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। চোখাচোখি হতেই হেসে ফেলে।
কী-রে! কি দেখছিলি এমন করে?
তোমাকে। তোমার চোখ দু’টো খুব সুন্দর।
তোমাকে। তোমার চোখ দু’টো খুব সুন্দর।
এই নিয়ে কতবার বললি?
হিসেব নেই। মুচকি হেসে জবাব দেয় অনি।
অনি, তুই কি আমার প্রেমে পড়ে গেছিস নাকি? নীলা হাসতে হাসতে বলে।
কী যে বল! আমি তোমার প্রেমে পড়ব কি করে? তোমার চোখের গভীরে কি আমি ঠাঁই পাবো? তাছাড়া, তোমার তো শিহাব ভাই আছে।
তোর বুঝি কেউ নেই?
আমার আবার কে থাকবে? আমাকে কি কেউ পছন্দ করবে?
কেন কেউ কি তোকে ভালবাসতে পারে না?
কেন কেউ কি তোকে ভালবাসতে পারে না?
হয়তো পারে, তবে সবার জন্য তো সবকিছু না। অনি মনে মনে বলে - তুমি কি আমায় ভালবাসতে পার না নীলাপু!
জানালা দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়াটা গায়ে লাগতেই কিছুটা শীত শীত লাগে নীলার। ব্যাগ থেকে শালটা বের করে গায়ে জড়ায়। হঠাৎ অনির দিকে চোখ পড়তেই দেখে, ও গভীর ভাবনায় ডুবে আছে।
এই অনি, কি ভাবছিস?
নীলার কণ্ঠ শুনে বাস্তবে ফিরে আসে অনি।
ভাবছিলাম আমাদের ভুলতে না পারা দিনগুলোর কথা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নীলা বলে- ভোলার দরকারই বা কী? তাই বলে বর্তমানকে অবহেলা করিস না।
অনি হেসে বলে- বর্তমানটা তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। আচ্ছা নীলাপু, তোমাদের ঘরের সামনে সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটা এখনো আছে?
হ্যাঁ আছে তো। বাবা কেটে ফেলতে চেয়েছিল কিন্তু আমার খুব পছন্দের বলে মা কাটতে দেয়নি।
হ্যাঁ আছে তো। বাবা কেটে ফেলতে চেয়েছিল কিন্তু আমার খুব পছন্দের বলে মা কাটতে দেয়নি।
কতদিন ওই গাছটার নীচে চেয়ার-টেবিল পেতে আমারা দাবা, ক্যারাম খেলেছি, কী টকটকে লাল ফুল ফুটত! তাইনা?
হ্যাঁ, সেই সব দিনগুলো কত আনন্দের ছিল! এখন মনে পড়লে খুব মন খারাপ হয়।
আমাদের জীবনটা বড় অদ্ভুত। জীবনের এই প্রান্তে এসে সেই দিনগুলোর কথা ভেবে প্রায়ই নস্টালজিক হয়ে যাই। নীলার দিকে ফিরে বলে অনি।
জীবনের যাঁতাকলে বন্দী থাকতে হয়। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, ওগুলোই আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।
তোমরা চিটাগাঙে আর কতদিন আছ?আরও দু’বছর।
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা হয় না?
গত ডিসেম্বরে গিয়েছিলাম।
আবার গেলে আমাকে জানিও।
আচ্ছা। কিছুক্ষণ থেমে নীলা বলে- অনি, এভাবে একা একা আর কতদিন? তুই একটা বিয়ে করে ফেল।
অনি মনে মনে বলে ‘তোমার মত কাউকে তো পাচ্ছি না!’ মুখে কিছুই বললো না।
গত ডিসেম্বরে গিয়েছিলাম।
আবার গেলে আমাকে জানিও।
আচ্ছা। কিছুক্ষণ থেমে নীলা বলে- অনি, এভাবে একা একা আর কতদিন? তুই একটা বিয়ে করে ফেল।
অনি মনে মনে বলে ‘তোমার মত কাউকে তো পাচ্ছি না!’ মুখে কিছুই বললো না।
কিছু বলছিস না যে!
অনি নিজের মনে আওড়ায়,
‘আমি শেকল দিয়ে বেঁধেছি
আমার প্রেম
বিষাদ-জলে এঁকেছি
জীবনের জলছবি
রাতের গভীরে ধারণ করেছি
নিশীথের কান্না
আর, আঁধারের মাঝে খুঁজে চলেছি
অন্ধকারের আলো।’
আমার প্রেম
বিষাদ-জলে এঁকেছি
জীবনের জলছবি
রাতের গভীরে ধারণ করেছি
নিশীথের কান্না
আর, আঁধারের মাঝে খুঁজে চলেছি
অন্ধকারের আলো।’
কিছু বললি?
অনি স্মিত হেসে বলে, কী প্রয়োজন? থাক না, চলে তো যাচ্ছে। মন খারাপ হলে আপার এখানে আসি। কয়েকদিন থেকে আবার ফিরে যাই। হারিয়ে যাই অন্তহীন কাজের ভিড়ে। ভালোই তো আছি।
অনি, একটা কথার উত্তর দিবি?
কি কথা?
একটু থেমে নীলা বলে- না থাক।
থাকবে কেন, বল না।
আমার ওপর তোর কোন রাগ আছে?
নাহ! তোমার উপর রাগ থাকবে কেন? কারো উপরই আমার কোন রাগ নেই।
কি কথা?
একটু থেমে নীলা বলে- না থাক।
থাকবে কেন, বল না।
আমার ওপর তোর কোন রাগ আছে?
নাহ! তোমার উপর রাগ থাকবে কেন? কারো উপরই আমার কোন রাগ নেই।
তাহলে আমার বিয়ের দিন তুই একেবারে উধাও হয়ে গেলি কেন? এতগুলো বছর পার হয়ে গেল,কেন আর যোগাযোগ করলি না?
অনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, দূরে থেকেছি এটা ঠিক কিন্তু তোমার খোঁজ আমি ঠিকই রাখতাম।
তাহলে যোগাযোগ করলি না কেন?
তাহলে যোগাযোগ করলি না কেন?
আসলে হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া কি হত যোগাযোগ রেখে? তোমার খবর তো পেতামই।
নীলা জানালার বাইরে তাকায়। চাঁদটাকে এখন আর চোখে পড়ছে না, ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারিদিক। রাতের প্রহরগুলো কেটে যায় দ্রুত। কামরার ভিতরে নিঃশব্দ-নিরবতা; বেশির ভাগ যাত্রীরা ঘুমিয়ে পড়েছে। বাসে-ট্রেনে একেবারেই ঘুম হয় না অনির। ঢাকা থেকে কক্সবাজার কখনো কখনো তের-চৌদ্দ ঘন্টাও জার্নি করেছে, কিন্তু কেন যেন ঘুমাতে পারে না সে। দু’জনের কথোপকথন চলে থেমে থেমে। দীর্ঘশ্বাসগুলো আরও গাঢ় হয়। অনেকদিন ধরে বুকে জমাট বাঁধা কষ্টগুলো বের হতে গিয়েও হয় না। একটা অদৃশ্য দেয়াল দু’জনকে আড়ালে রাখে। দু’জনেই কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে।অনি আবার নীরবতা ভাঙে।
অঞ্জনের কাছে কিছু কিছু শুনেছি। তোমার কষ্টের কথা শুনতে আমার ভাল লাগে না নীলাপু।
আমি মেনে নিয়েছি আমার ভাগ্য। কার কি করার আছে বল?
কিন্তু তোমার ভাগ্য তো এমন হবার কথা ছিল না!
নীলা নিশ্চুপ। অনেকক্ষণ পর বলে,
তুই কি আজই কক্সবাজার যাবি?
হ্যাঁ, ছুটি শেষ।
চিটাগাঙ আসিস না?
আসি মাঝে মাঝে। কাজ সেরে আবার ফিরে যাই।
এরপর আসলে বাসায় আসবি।
অনি হাসে। তোমার কষ্ট বাড়াতে?
কী যে বলিস না! কষ্ট বাড়বে কেন? তুই আসলে বরং ভাল লাগবে।
তুই কি আজই কক্সবাজার যাবি?
হ্যাঁ, ছুটি শেষ।
চিটাগাঙ আসিস না?
আসি মাঝে মাঝে। কাজ সেরে আবার ফিরে যাই।
এরপর আসলে বাসায় আসবি।
অনি হাসে। তোমার কষ্ট বাড়াতে?
কী যে বলিস না! কষ্ট বাড়বে কেন? তুই আসলে বরং ভাল লাগবে।
আচ্ছা দেখি। তোমরা কক্সবাজার গেলে আমাকে জানিও। আমাদের কোম্পানির গেস্ট হাউজ আছে। থাকার কোন সমস্যা হবে না।
আচ্ছা, এরপর আসলে তোকে জানিয়ে আসবো।
রাত শেষ হয়ে আসে ভোর। আকাশ ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে আসে। জানালা দিয়ে আবছাভাবে চোখে পড়ে- সবুজ পাহাড়গুলো উঁকি দিচ্ছে দূরে। অল্পক্ষণের মধ্যে ট্রেন পৌঁছে যায় চিটাগাঙ। অনি নীলার দিকে তাকায়। নীলার চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে।
কী হল নীলাপু, তুমি কাঁদছো?
চোখ মুছে নীলা বলে- কই না তো! চোখে কি যেন পড়েছে।
আমার কাছে লুকাচ্ছো?
নীলা নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।
চল তোমাকে এগিয়ে দিই।
চল।
দু’জনে ট্রেন থেকে নামে। অনি নীলার জন্য ট্যাক্সি ঠিক করে দেয়। নীলা ট্যাক্সিতে উঠে বসে।
ভাল থাকিস অনি।
চোখ মুছে নীলা বলে- কই না তো! চোখে কি যেন পড়েছে।
আমার কাছে লুকাচ্ছো?
নীলা নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।
চল তোমাকে এগিয়ে দিই।
চল।
দু’জনে ট্রেন থেকে নামে। অনি নীলার জন্য ট্যাক্সি ঠিক করে দেয়। নীলা ট্যাক্সিতে উঠে বসে।
ভাল থাকিস অনি।
অনি হাসে।
ট্যাক্সি একটু একটু করে এগিয়ে যায়, অনি তাকিয়ে থাকে নীলার যাত্রাপথের দিকে। মনে মনে বলে -
আছি, ভাল আছি। খুব ভাল।
ট্যাক্সি একটু একটু করে এগিয়ে যায়, অনি তাকিয়ে থাকে নীলার যাত্রাপথের দিকে। মনে মনে বলে -
আছি, ভাল আছি। খুব ভাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন