আমার কখনও গ্রাম
দেখা হয়নি সেভাবে। শহরে জন্ম, বেড়ে ওঠা। গ্রামের
সাথে কোন সম্পর্কই তৈরি হয়নি! বন্ধুদের কাছ থেকে ওদের গ্রামের কথা শুনতাম। বাবাকে গ্রামের
বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলেই বলতেন- আমাদের কোন গ্রামের বাড়ি নেই, নদীতে
ভেঙ্গে গেছে। গ্রাম আমার কাছে ছিল কেবলই
বইয়ে পড়া আর টেলিভিশনে দেখা ছবির মত! সেদিন শিবলী যখন জিজ্ঞেস করল ও দুদিনের জন্য
গ্রামে যাচ্ছে আমি যাব কিনা, কোন চিন্তা না করেই রাজি হয়ে গেলাম। এই
রাজি হওয়া যে ঝোঁকের মাথায় তা নয়, অনেকদিন থেকেই শিবলীর কাছে ওদের গ্রামের গল্প
শুনে শুনে আমার মনে সত্যিকারের গ্রাম দেখার একটি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
আজ সকালে বাস
থেকে নেমে রিকশা ভ্যানে করে অনেকটা পথ আসার পর নৌকা পার হয়ে যখন ওদের গ্রামে
ঢুকলাম, আমার মনে হয়েছিল এটাই তো বাংলার আসল সৌন্দর্য! নদীর পাড় ঘেঁষে বেড়িবাঁধ
ধরে চলার পথে গ্রামের চোখ জুড়ানো নৈস্বর্গিক রূপ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। একপাশে
শান্ত নদীর টলটলে পানি আর অন্যদিকে বিশাল ফাঁকা ফসলের ক্ষেতে রাশি রাশি সবুজের
অপার সৌন্দর্য এর আগে আমি কখনও স্বচক্ষে দেখিনি। এই
গ্রামে আসার পর আমার মনে হল বাংলার এই রূপের কথাই তো ছেলেবেলা থেকে বিভিন্ন কবি
সাহিত্যিকের লেখায় পড়েছি। আজ এই মুহুর্তে সত্যিকার
অর্থেই আমি গ্রামকে ভালবাসলাম।
ওদের বাড়ির
প্রবেশ পথটা যেন ছবির মত সুন্দর! প্রসস্ত কাঁচা রাস্তা সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়ানো, দু’পাশে আকাশমণি আর মেহগনি গাছের ফাঁকে ফাঁকে সূর্যের আলোছায়ার লুকোচুরি
খেলা! শেষ বিকেলের হালকা আলোয় এই শান্ত স্নিগ্ধ পথে
হাঁটতে কী যে ভাল লাগে! রাস্তার একপাশ ঘেঁসে একটি সুবিশাল দিঘি, তার একদিকের চওড়া পাড়ে ঘন সবুজ ছনের বন।
সারাদিন ওদের
বাড়ির মানুষগুলোর চমৎকার আতিথেয়তার পর বিকেলে দূরে কোথাও যেতে চাইলে শিবলী জানালো
আজ বিকেলে একটা সালিশ বসবে,
ওখানে থাকতে হবে। আমি কিছুটা
কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কিসের সালিশ রে? ও বলল কিছুদিন আগে আমার এক জ্ঞাতি
বোনের মেয়েকে ওর জামাই মেরে ফেলেছে, তার বিচার হবে। মনটা
খারাপ হয়ে গেল। আমি ভেবেছিলাম কখনও গ্রাম্য সালিশ দেখিনি, আজ মজার
একটা অভিজ্ঞতা হবে। এখন দেখছি মানুষ হত্যার
বিচার! বললাম- হত্যাকাণ্ড হয়েছে তো পুলিশের কাছে যাবে, গ্রামের
সালিশে কী বিচার করবে? ও বলল-
দোস্ত, সব সময় থানা-পুলিশ দিয়ে কাজ হয়না, বাস্তবতা বড় কঠিন!
আমরা দু’জন
রাস্তার দিকে হাঁটতে লাগলাম। শিবলী কিছুদূর এগিয়ে রাস্তার
পাশে ছোট্ট একটি বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। বাড়িটিতে একটি মাত্র ঘর। ছনের
ছাউনি আর হোগল পাতার বেড়া দেয়া ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর। শিবলী আমাকে নিয়ে
বাড়িটির মধ্যে প্রবেশ করলো। সামনের ছোট্ট উঠোনটিতে কাউকে
দেখতে না পেয়ে আমরা ঘরের পাশ দিয়ে পিছন দিকে চলে আসলাম। সেখানে এক চিলতে
খোলা জায়গায় মাটির চুলায় রান্নায় ব্যস্ত কৃশকায় এক মহিলা এবং কোলের কাছে বসা বছর চারেকের
একটি ছেলে। শিবলীর সাথে একজন অচেনা মানুষ দেখে মহিলা পরনের মলিন কাপড়ে
নিজেকে ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মহিলাকে বিব্রতকর অবস্থায়
ফেলার জন্য আমি নিজেই লজ্জিত বোধ করছিলাম। ভয় নেই, ও আমার
বন্ধু শোভন। আমার সাথে বেড়াতে এসেছে। শিবলীর কথায়
মহিলা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে ও জিজ্ঞেস করল- কেমন আছ ফুলবু? দেখলাম মহিলার চোখ দুটো ছল ছল কর উঠছে। কিছুক্ষণের
মধ্যেই দু’চোখ বেয়ে নামলো অশ্রুর ধারা। আমার ময়না পাখি
নাইরে শিবু! ওরা মাইরা ফালাইছে। আমি কত জায়গায় গেলাম, কত
কানলাম, কেউ আমার কতা হুনে না। বলে
মুখে আঁচল দিয়ে কেঁদে চলল মহিলা।
কাউকে কাঁদতে
দেখলে আমি নিজেকে সামলাতে পারি না, অজান্তেই নিজের চোখ ভিজে ওঠে। আমি
নিজের অশ্রু সংবরণ করতে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। শিবলী তাকে সান্ত্বনা
দেবার চেষ্টা করল কিন্তু এই রকম মূহুর্তে আসলে কোন সান্ত্বনাবাক্যই মানুষের মনকে
বুঝ দেবার জন্য যথেষ্ট নয়। একটু পর মহিলা কিছুটা
শান্ত হয়ে এলে শিবলী জানতে চাইলো আসলে কি ঘটেছিল। মহিলা কান্নাভেজা
কন্ঠে ময়নার নিহত হবার করুণ কাহিনী জানালো। ময়নার স্বামী
এডিক্টেড ছিল এবং নেশা করে প্রায় প্রতিদিনই ওকে মারধর করতো, ওর মায়ের
কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য চাপও দিত। ময়নার
শ্বশুরবাড়ির লোকজন অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কাজ হয়নি। ঘটনার
রাতে এই টাকা নিয়েই দুজনের মধ্যে তর্ক হয়, ময়নার স্বামী ওকে মারধরও করে এবং
এক পর্যায়ে লাঠির আঘাতে ময়না মারা যায়। সেই রাতেই লাশ ঘরের
পাশের গাছে ঝুলিয়ে রাখার সময় সুমনের চিৎকারে আশেপাশের ঘর থেকে লোকজন বের হয়ে আসলে
ঘটনা চাপা দেয়া আর সম্ভব হয় না।
ময়নার মৃত্যু
কাহিনী শুনে মনটা ভার হয়ে এলো। আমরা ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম। আমার
বেড়াতে আসার মজাটা আর রইল না। কেন জানি কোন কিছুতেই আর আনন্দ
পাচ্ছিলাম না। বার বার মনে হচ্ছিলো এই হত্যার বিচার হওয়া দরকার। আমরা আর দূরে
কোথাও গেলাম না। দিঘির পাড়ে গাছের ছায়ায় বসে গ্রামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলাম আর
অপেক্ষা করতে লাগলাম সালিশের লোকজন আসার জন্য।
চৈত্রের দুপুরের
প্রখর রোদের রেশ কাটিয়ে সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে অনেক আগেই। পড়ন্ত
বেলার সোনালী রোদের আভা ছড়িয়ে পড়েছে পথের দু’পাশের আকাশমণি আর মেহগনি গাছগুলোর
উপরে। দিঘির পাড় ঘেঁষা পানের বরজ ছাড়িয়ে বিস্তীর্ণ সবুজ ছনক্ষেতের উপর দিয়ে ঢেউ
খেলানো দখিণা বাতাস আছড়ে পড়ছে ফুলজানের ছোট্ট কুঁড়েঘরের দাওয়ায়। এই
শীতল বাতাস ফুলজানের মনের ভিতরে বয়ে যাওয়া অশান্ত ঝড়কে দমাতে পারে না এতটুকুও। বুকের
ভিতর জমাট বাঁধা কষ্টগুলোকে যেন বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই। ওর ঘরের সামনের
ছোট্ট উঠোনটির উপর ছড়ানো রেইন্ট্রির ছায়ায় আজ সমাবেত হয়েছে গাঁয়ের সব গণ্যমাণ্য
মানুষজন। কি সৌভাগ্য ফুলজানের! তার ভাঙা কুটিরে আজ কত অতিথি!
এখানে আজ আয়োজন করা হয়েছে ওর বুকের পাঁজর ভেঙ্গে কেড়ে নেয়া ময়নার জীবনের মূল্য
নির্ধারণের আসর। কতই বা দাম তার মেয়ের জীবনের? গরীবের
জীবনের কোন দাম আছে? গরীব মরলে কার কী আসে যায়?
ঘরের পিছন দিকের
দাওয়ায় অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছে ফুলজান। সামনের উঠান থেকে নানান রকম
কথা ভেসে আসছে। কোন কিছুতেই ভ্রুক্ষেপ নেই তার। ঝাঁপসা দৃষ্টিতে সে
তাকিয়ে আছে ঘরের পিছনের ছোট্ট পরিসরে রান্না করার খোলা জায়গাটিতে খেলায় নিমগ্ন
অবুঝ সুমনের দিকে। কী নিশ্চিন্তমনে খেলছে ছেলেটি! যেন কিছুই হয়নি। মাত্র চার বছর
বয়সেই মাতৃহারা। এই অবুঝ শিশুটির মাতৃত্বের দাম কিভাবে ঠিক করবেন
ওনারা? এক যুগ আগে স্বামী হারানো ফুলজান আজ সন্তানহারা, তার নিস্পাপ মেয়েটির জীবনের কী দাম দিবেন?
গত দুই সপ্তাহ
ধরে কত জায়গায় বিচার চেয়েছে! গরীবের জন্য কোন আইন নেই। সবাই বলল, থানা-পুলিশ
করে লাভ নেই, ওদের সাথে পেরে উঠবে না। তাই
আজ সবাই এসেছে ওর মেয়ের জীবনের মূল্য বুঝিয়ে দিতে। কী ক্ষতি
করেছিলো সে? সে তো তার দুই সন্তান ময়না আর হাসুকে নিয়ে
অভাবের সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে ছিল। অভাব থাকলেও ছেলেমেয়েদের
আগলে ছিল পরম মমতায়। তার ফুলের মত সুন্দর মেয়ে
ময়নাকে দেখে সবাই বলতো- দেখিস, তোর মেয়ের বিয়ের সমস্যা হবে না। সমস্যা
হয়ওনি। পাঁচ বছর আগে, পাশের গাঁয়ের খোনকার বাড়ি থেকে
যখন প্রস্তাব আসে ফুলজান রাজী হয়নি প্রথমে। ও গরীব মানুষ, তাছাড়া
ময়নার বয়সও অনেক কম। আশেপাশের সবাই বোঝালো অবস্থাপন্ন
ঘর থেকে সম্মন্ধ এসেছে,
তোর মেয়ের কপাল ভাল, এমন ভাল সম্মন্ধ ফিরিয়ে
দিস না। বিয়ে দিলে ওর মেয়ে ভাল থাকবে, তাই রাজী
হয়ে যায় ফুলজান। সবাই বলেছিল, তুই অনেক ভাগ্যবান। সেই
ভাগ্য তাকে আজ কোথায় নিয়ে এলো? পোড়া কপালে সুখ লেখা নেই, মানুষ কিভাবে তাকে সুখ দিবে?
উঠানের সভা থেকে
ডাক পড়তেই ঘোর কেটে যায় ফুলজানের। ঘরের পিছন থেকে সামনের
বারান্দার দরজায় এসে দাঁড়ায়। সভায় গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বার
ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাঝে ময়নার শ্বশুর আর ভাসুরও উপস্থিত আছে। চেয়ারম্যান
ফুলজানকে ডেকে বললেন,
দেখো ফুলজান, ময়নারে
তো আর ফিরা পাওয়া যাইব না, আর কেছ-কাছারি কইরাও কারো কোন
ফয়দা অইব না। তাই আমরা চাই এইহানেই এইডার
একটা ফয়সালা করতে। তোমার কিছু বলার থাকলে বল;
ফুলজান অনেকক্ষণ
চুপ করে থাকে, তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে- আমার তো সবই শেষ! আমি আর কী কমু, আমার কতা কেডা হুনে! আফনারা যা ভালো মনে
করেন তাই করেন।
আমরা তোমার
মনের অবস্থা বুঝি কিন্তু তোমার সামর্থের কথাও তো চিন্তা করতে অইব। কেছ-কাছারি
বড় ঝামেলার কাম,
তাই এই ঝামেলায় না যাইয়া একটা মীমাংসা কইরা ফেলাই ভাল। বলে
উঠে চেয়ারম্যান
ফুলজান কিছুই বলে
না, তার চোখে কেবলই ভাসতে থাকে নিস্পাপ ময়নার মুখ। ছোটবেলা থেকে কত
যুদ্ধ করে তিল তিল করে বড় করে তুলেছে, সেই মেয়েটার নিথর দেহটা ওকে
সারাজীবন কষ্ট দিবে। আর ছোট্ট সুমন! ও কী দোষ
করেছে? ও কেন মা হারা হল?
বাড়ির কয়েকজন
যুবক বলে উঠলো- তাইলে এই হত্যার কোন বিচার অইব না?
চেয়ারম্যান বলে
উঠলো- দেখো, মামলা করলে করতে পার কিন্তু তা চালাইবার সামর্থ আছে ফুলজানের? বার বার কোর্টে হাজিরা দিতে অইব, উকিলের পিছনে
টাকা খরচ করতে অইব। তাতে কারো কোন লাভ অইব? সবারই হয়রানি
অইব। তোমরা কয়দিন অর পাশে থাকবা? তার চেয়ে
ফুলজান যাতে যথার্থ ক্ষতিপূরণ পায় সেই ব্যবস্থা করা কী
ভাল না?
না না, মামলা
টামলার দরকার নাই, আমাদের বংশে এগুলান কেউ কোনদিন করে নাই। এইহানেই একটা
ফয়সালা কইরা দেন চেয়ারম্যানসাব। বয়সে প্রবীণ ফুলজানের এক চাচা
ছমির মিয়া বলে উঠলেন।
ময়নার শ্বশুর কি
বলতে চায় সেইটা আমরা আগে হুনি, তারপর সিদ্ধান্ত অইব।
আমি খুব
শর্মিন্দা ভাই সাহেব,
আমি জানি এই মৃত্যুর কোন ক্ষতিপূরণ অয় না, তাই আপনারা যা বলবেন আমি তাই মাইনা নিমু। ময়নার শ্বশুর বলে
উঠলেন।
তাইলে আমরা আগে
হুনি ফুলজানের কি দাবী?
ফুলজান চুপচাপ
ঘরের দারজায় দাঁড়িয়েই থাকে। কী বলবে?
তার মেয়ের জীবনের কি দাম চাইবে সে?
ফুলজানরে এক লাখ
টাকা দিবেন। ময়নার শ্বশুরের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে চেয়ারম্যান
যুবকদের মধ্যে
শোরগোল শুরু হয়ে যায়। এইডা কেমন বিচার? মাত্র এক
লাখ টাকা! কেউ কেউ বিচার নিয়েই প্রশ্ন তুলল।
তাইলে তোমরাই ঠিক
কইরা দাও, আমাদের তো আর এইহানে থাকার দরকার নাই!
ছমির মিয়া ধমকে
ওঠে। তোদেরকে এইহানে কেডা ডাকছে? যত্তসব
বান্দরের দল। সবগুলান এইহান থেইকা চইলা যা।
মুরুব্বির কথা
অনুযায়ী যুবকরা অনিচ্ছাসত্বেও সভা থেকে চলে যায়। ছমির মিয়া
চেয়ারম্যানকে বিচারকার্য চালাতে বলেন।
চেয়ারম্যান ময়নার
শ্বশুরের উদ্দেশ্যে বলেন,
আপনি ফুলজানকে এক লাখ টাকা বুঝাইয়া দিবেন। কতদিনের
মধ্যে টাকাটা দিবেন?
আমারে এক সপ্তাহ
সময় দেন ভাইসাহেব
তাইলে অই কথাই
রইল। এক সপ্তাহের মধ্যে ময়নার শ্বশুর ফুলজানকে এক লাখ টাকা
বুঝাইয়া দিবে। বললেন চেয়ারম্যান।
সালিশ শেষ হয়ে
গেলে একে একে সবাই চলে যায়। ছোট্ট ফাঁকা উঠোনটির মাঝখানে
পাথরের মূর্তির মতই কিছুক্ষণ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে ফুলজান। সে বুঝল, তার
ময়নার জীবনের দাম মাত্র এক লাখ টাকা। গ্রামের
মান্যগণ্য মানুষজন এই দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার আর কিছুই বলার নাই। ময়নার
একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন ছোট্ট সুমন এসে হাত ধরে। ফুলজান ওকে জড়িয়ে
ধরে বলে, আমারে মাপ কইরা দিস ভাই, আমি তোর মা’রে বেইচা দিলাম, আমি আমার ময়নারে বেইচা দিলাম।
আমি রাস্তায়
দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ এই দৃশ্যটা দেখে ভাবছিলাম কি অদ্ভুত মানুষের জীবন! গ্রাম্য
সালিশের কথা অনেক শুনেছি,
আজ নিজের চোখে দেখলাম কিভাবে কেউ কেউ অন্যের ক্রীড়ানকে পরিণত হয়!
শিবলী আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আমাকে নিয়ে সামনের দিকে চলে এল। আমরা হাঁটতে
হাঁটতে দিঘির পাড়ে এসে বললাম। সন্ধ্যা হতে তখনও কিছুটা
বাকি, সূর্য ডোবার আগে গোধূলির শেষ আলোটুকুর আভা ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। দিঘির জলে তার লাল রঙের ছায়া পড়ে অদ্ভুত মায়াময় এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে
কিন্তু এই সুন্দর পরিবেশও আমাকে আকৃষ্ট করছে না। মনের মধ্যে কেবলই
ভাসছে ফুলজানের শেষ কথাগুলো- আমি আমার ময়নারে বেইচা দিলাম, বেইচা
দিলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন